Sports News

ক্রিকেট বিশ্বকাপ কোন দেশ কতবার নিয়েছে

Rate this post

ক্রিকেট বিশ্বকাপ কোন দেশ কতবার নিয়েছে

বর্তমানের জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে ফুটবল, আইস হকি, টেবিল টেনিস বিশ্বকাপের শুরু হয় দুই মহাযুদ্ধের মাঝে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চালু হয় হকি, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, রাগবির বিশ্ব আসর। সেই তুলনায় ক্রিকেট অনেক পিছিয়ে। প্রায় দুশো বছরের পুরনো এ খেলার প্রথম বিশ্বআসর আয়োজিত হয় ১৯৭৫ সালে। অবশ্য ১৯০৯ সালে আইসিসি প্রতিষ্ঠার পর একবার বিশ্বকাপের চেষ্টা হয়েছিল। ১৯১২ সালে টেস্ট খেলুড়ে তিন দেশ অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিয়ে আয়োজিত চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেয় ইংল্যান্ড। কিন্তু একটি ম্যাচই যদি হয় পাঁচ দিনের, তাহলে যে বিশ্বকাপ শেষ করতে দীর্ঘদিন সময় লাগবে! তাই সেখানেই থমকে যায় ক্রিকেটের বিশ্ব আসরের পরিকল্পনা। তবে এ সমস্যার সমাধান হয় ১৯৭১ সালের ৫ জানুয়ারি, এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ চালু হওয়ার পর। ১৯৭১ সালে ওডিআই শুরুর পর ১৯৭৫ সালের ৭ জুন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ মাঠে গড়ানোর আগ পর্যন্ত মোট ওয়ানডে খেলা হয়েছিল মাত্র ১৮টি, টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা ছিল ৮৪টি। এখন পর্যন্ত মোট ১২টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজিত হয়েছে। শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়েছে ছয়টি দল। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সবচেয়ে সফল দল অস্ট্রেলিয়া। অজিরা শিরোপাজয়ের স্বাদ পেয়েছে পাঁচবার। দুবার করে বিজয়ী হয়েছে দুটি দল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত) ও একবার করে জিতেছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ইংল্যান্ড। একনজরে প্রত্যেকটি টূর্নামেন্টের সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো। ১৯৭৫ বিশ্বকাপ : ঐতিহ্য ও অবকাঠামোগত সামর্থ্য বিবেচনায় প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দেয়া হয় জন্মদাতা দেশ ইংল্যান্ডকে, ১৯৭৩ সালে। ৫টি শহরের ৬টি স্টেডিয়ামে লড়াইয়ে নামে ৮টি দল। ৬ টেস্ট খেলুড়ে দেশ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট-ইন্ডিজ, ভারত ও পাকিস্তান; সাথে শ্রীলঙ্কা ও পূর্ব আফ্রিকা। খেলা ছিল প্রতি ইনিংস ৬০ ওভার। প্রুডেনশিয়াল ইন্সুরেন্সের কাছ থেকে এক লাখ পাউন্ড স্পন্সর পাওয়ায় আসরের নাম রাখা হয় ‘প্রুডেনশিয়াল কাপ’। ৮ দল ২ গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলে লিগ পর্ব। প্রত্যেক গ্রুপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুটি দল যায় সেমিফাইনালে। প্রথম সেমিতে স্বাগতিকদের কাদিয়ে ফাইনালে ওঠে অস্ট্রেলিয়া, অপর ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারায় ওয়েস্ট-ইন্ডিজ। লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ফাইনালে ক্লাইভ লয়েডের ৮৫ বলে ১০২ রানের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ২৯১ রান তোলে ক্যারিবিয়ানরা। জবাবে অজিদের ইনিংস শেষ হয় ২৭৪ রানে। ১৭ রানে ফাইনাল জিতে প্রথম বিশ্বকাপ নিজেদের করে নেয় ক্যারিবিয়রা। ১৯৭৯ বিশ্বকাপ : আগেরবার না    ফুটবল বিশ্বকাপ কে কতবার নিয়েছে    পারলেও এবার ফাইনালে ওঠে ইংলিশরা। তবে তাদেরও আত্মসমর্পণ করতে হয় ক্লাইভ লয়েডের বাহিনীর কাছে। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ৯২ রানের বড় ব্যবধানে প্রথম দুটি শিরোপাই জিতে নেয় ওয়েস্ট-ইন্ডিজ। ১৯৮৩ বিশ্বকাপ : এটাই সর্বশেষ প্রুডেনশিয়াল কাপ। টানা তৃতীয়বার লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আবারও ওয়েস্ট-ইন্ডিজ। এবার প্রতিপক্ষ আন্ডারডগ ভারত। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ক্যারিবিয়দের ৪৩ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ভারতীয়রা। ক্লাইভ লয়েডের পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে প্রুডেন্সিয়াল কাপ উচিয়ে ধরেন কপিল দেব। ১৯৮৭ বিশ্বকাপ : প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডের বাইরে ভারত ও পাকিস্তানে আয়োজিত এ আসরে ইংলিশ দিবারাত্রি সময়ের সাথে ভারতীয় সময়ের পার্থক্যের কারণে ৬০ ওভারের বিশ্বকাপ নেমে আসে ৫০ ওভারে, বদলে যায় স্পনসরের নামও। রিলায়েন্স স্পন্সর করায় আসরের নাম হয় ‘দ্য রিলায়েন্স কাপ। ধারণা করা হয়, ভারতের জয়পুরে তৈরী এ কাপে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ ছিল। প্রথমবারের মতো গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ক্যারিবিয়রা। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে ফাইনালে ইংল্যান্ডে ৭ রানে হারিয়ে প্রথম শিরোপা জয় করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া, যা এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনাল হয়ে আছে। ১৯৯২ বিশ্বকাপ : অস্ট্রেলিয়ায় ঋতু পরিবর্তনের কারণে ‘৯১ এর পরিবর্তে ১৯৯২ সালে হয় বিশ্বকাপ। এ আসরেও বদলে যায় অনেক নিয়ম। প্রথমবারের মত দেখা যায় রঙিন জার্সি, লাল বলের পরিবর্তে সাদা বল। ফ্লাডলাইটের আলোয় খেলার সাথে যোগ হয় নতুন ট্রফি। এবারের স্পন্সর বেনসন অ্যান্ড হেজেস। অবসর ভেঙ্গে পাকিস্তানকে শিরোপা জেতান ইমরান খান। মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২২ রানে হারায় পাকিস্তান। এ বিশ্বকাপ ট্রফিই একমাত্র শিরোপা, যাতে কোনো প্রকার মেটাল ব্যবহার করা হয়নি, সম্পূর্ণ ক্রিস্টাল। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ : আবারও বিশ্বকাপ ভারতীয় উপমহাদেশে। ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা তিনদেশে আয়োজিত এ আসরের নাম উইলস ওয়ার্ল্ড কাপ। এবারও ব্যবহার হয় ভারতের জয়পুরে তৈরী নতুন ট্রফি। পুরো ক্রিকেট দুনিয়াকে অবাক করে অপরাজিত বিশ্বকাপ জেতে শ্রীলঙ্কা। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের ফাইনালে সাত উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় অর্জুনা রানাতুঙ্গার দল। এবার নিজেদের নামে কিছু করার কথা ভাবলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল। প্রতি বিশ্বকাপেই ট্রফির বদলের সঙ্গে সঙ্গে স্পনসরের নামে বিশ্বকাপ আয়োজনে বদলে ঠিক করা হলো, পরের বিশ্বকাপ থেকেই শুরু হবে এক ট্রফির চল, যার একটি করে রেপ্লিকা দেওয়া হবে বিজয়ী দেশকে। পাশাপাশি বিশ্বকাপের নামও হবে আইসিসির নামে, স্পনসরের নামে নয়। তৈরি করা হলো ৬০ সেন্টিমিটার উচ্চতার কাপ, যার তিনটি রৌপ্যদণ্ডের ওপর একটি স্বর্ণের ভূগোলক। তিনটি দন্ড দিয়ে বোঝানো হয়েছে ক্রিকেটের স্ট্যাম্পকে, আর ভূগোলক দ্বারা ক্রিকেট বল। ১১ কেজি ওজনের বিশ্বকাপটির নিচে ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সবগুলো জয়ী দলের নাম লেখা আছে। আরও ১০টি দলের নাম যুক্ত করা যাবে। আসল বিশ্বকাপ ট্রফিতে রয়েছে আইসিসির লোগো। অন্যদিকে বিজয়ী দলগুলোকে যে রেপ্লিকা ট্রফি দেওয়া হয় তাতে থাকে সে আসরের লোগো। এখন পর্যন্ত মাত্র ৩টি দল উঁচিয়ে ধরতে পেরেছে এই শিরোপা-অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ভারত। ১৯৯৯ বিশ্বকাপ : ১৬ বছর পর ইংল্যান্ডে ফিরলো বিশ্বকাপ ক্রিকেট। এ আসর বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় এক আসর। আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায় টাইগাররা। প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দেয় আকরাম খানের দল। লর্ডসের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। ২০০৩ বিশ্বকাপ : এই প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজিত হলো আফ্রিকা মহাদেশে, দক্ষিণ আফ্রিকায়। নিজেদের দ্বিতীয় আসরে সবগুলো ম্যাচই হেরে যায় বাংলাদেশ। জোহানসবার্গে ফাইনালে ভারতকে ১২৫ রানে উড়িয়ে দিয়ে টানা দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলে অজিরা। ২০০৭ বিশ্বকাপ : ওয়েস্ট-ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ‘০৭ বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় এক আসর। তারুণ্যে ভর করে প্রথম ম্যাচেই টূর্নামেন্টের হট ফেভারিট ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ও অন্যম্যাচে বার্বাডোজকে হারিয়ে সুপার-৮ এ জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। ভারত ছিটকে যায় গ্রুপপর্ব থেকেই। এটিই একমাত্র আসর যেখানে ১৬টি দল চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলেছে। সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আবারো চমক দেখায় আশরাফুল বাহিনী। বার্বাডোজে অনুষ্ঠিত ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে ৫৩ রানে হারিয়ে ‘৯৬ বিশ্বকাপের প্রতিশোধ নেয় অস্ট্রেলিয়া। একই সঙ্গে প্রথম দল হিসেবে হ্যাট্রিক শিরোপা জিতে নেয় অজি ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ দলটি। ২০১১ বিশ্বকাপ : প্রথমবারের মতো নিজেদের মাটিতে বিশ্বকাপ আয়োজন করে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে। ১৪ দলের এ আসরে তিনটি ম্যাচে জয়লাভ করলেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ফাইনালে উত্তীর্ণ হয় তিন স্বাগতিক দলের মধ্যে দুই দল শ্রীলঙ্কা ও ভারত। শ্রীলঙ্কাকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয়বার শিরোপা তুলে নেয় ধোনিবাহিনী। ২০১৫ বিশ্বকাপ : ‘৯২ এর পর আবারো স্বাগতিক হলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। এই বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে মাশরাফি বিন মর্তুজার বাংলাদেশ। মেলবোর্নে রেকর্ড ৯৩ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ফাইনালের লড়াইয়ে নামে দুই স্বাগতিক। একপেশে ম্যাচে কিউইদের ৭ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপ জিতে নেয় অজিরা। ২০১৯ বিশ্বকাপ : ইংল্যান্ডে আয়োজিত হয় বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসর। এ আসরে বাংলাদেশ প্রত্যাশিত ফলাফল না করলেও অসাধারণ অলরাউন্ড নৈপুন্য দেখান সাকিব আল হাসান। লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচটি শুধু বিশ্বকাপ নয়, ক্রিকেট ইতিহাসেরই সবচেয়ে উত্তেজনাপূর্ণ ওডিআই ম্যাচ। ফাইনালে মাঠে নামে আগের আসরের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড ও স্বাগতিক ইংল্যান্ড। নির্ধারিত পঞ্চাশ ওভারে ম্যাচ অমিমাংসিত হওয়ায় প্রথমবারের মতো খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। আশ্চর্যজনকভাবে সুপার ওভারেও খেলা ড্র হওয়ায় বাউন্ডারি আইনে জয়ী ঘোষণা করা হয় ইংল্যান্ডকে। আরো একবার ফাইনালে হারার দুঃখ সঙ্গী হয় কিউইদের। মোট ১১ টি বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে ৬ টি দেশ। দেশগুলো হচ্ছে- অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান। সর্বশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে ১৯৭৫ সালে।

ক্রিকেট বিশ্বকাপ কোন দেশ কতবার নিয়েছে
ক্রিকেট বিশ্বকাপ কোন দেশ কতবার নিয়েছে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button