চিঠি লেখার নিয়ম
চিঠি লেখার নিয়ম চিঠি মানব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তথ্য কিংবা মনোভাব আদান প্রদানের জন্য চিঠিই একসময় চালু ছিলো। যদিও বা এর চর্চা বর্তমান সময়ে অনেক কম। আজকে আমি চিঠি লেখার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ডিজিটাল এই যুগে চলে আধুনিক সব প্রযুক্তির কারবার। এই যুগে প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরো দুনিয়াকে হাতের মুঠোতে আনা হয়েছে।
এবং যোগাযোগ ক্ষেত্রকে সহজতর করা হয়েছে। মানুষ ইচ্ছা করলে সেকেন্ডে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে খবর পাঠাতে পারছে।
Google News Flow Now
আগে বলি চিঠির কাজ কি? কেনো আদিম মানুষ চিঠি পাঠাত?
প্রাচীন যুগে চিঠি পাঠানো হতো কেবল মাত্র তথ্য আদান প্রদান ও গুরুত্বপূর্ণ কোনো খবর পাঠানোর ক্ষেত্রে। তখন পাখির মাধ্যমে কিংবা পায়রার সাহায্যে চিঠি পাঠানো হতো।
কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছে। তাই মানুষ আর পায়রার মাধ্যমে চিঠি পাঠায় না।
একজন মানুষেই অন্য সবার চিঠি গন্তব্যস্থলে পৌছে দেয়, আমরা যাকে বলি পোষ্ট মাস্টার।যখন চিঠি পাঠানো আরো সহজ হয়ে গেলো মানুষ তখন চিঠিকে অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা শুরু করলো।
যেমন, চিঠির সাথে টাকা পাঠানো,জরুরী কোনো কাগজপত্র পাঠাতে ইত্যাদি। যেহেতু চিঠি কোনো মানুষ নিয়ে যাচ্ছে তাই ক্ষতি হয়ার সম্ভবনা নেই।
চিঠি পাঠানোর সময়কাল কখন ছিলো ?
মানুষ প্রায় আদিম যুগ থেকে চিঠি পাঠাতো। চিঠি পাঠানোর এই প্রাচীন রীতি ১৯ শতক পর্যন্ত বহাল ছিলো।
কিন্তু এর পর পৃথিবীতে শিল্পবিপ্লব ঘটার কারণে মানুষের কাছে চিঠি পাঠানোর সংস্কৃতি অনেকটা অবহেলিত। তবে এখনো কিছু মানুষ আছে যারা এই যুগেও চিঠি লিখে।
বর্তমান যুগে শুধু বই খাতায় চিঠি দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু মানুষকে চিঠি পাঠাতে দেখা যায় না।
আর্থাত চিঠিপত্র বর্তমানে বই-খাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর দ্রুত যোগাযোগ এর জন্যে ফেসবুক আর ইমেইল তো আছেই।
যাইহোক আমারা প্রধান আলোচনার দিকে যাই।চিঠি লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে।
ক্রিকেট খেলা দেখার সফটওয়্যার
চিঠির প্রকারভেদ।
চিঠির বিষয়বস্তু, ধরণ ও কাঠামো অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের চিঠি লক্ষ্য করা যায়। নিচে এসব চিঠি লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১। ব্যাক্তিগত চিঠি বা পত্র।
২।প্রাতিষ্ঠানিক পত্র বা আবেদনপত্র।
৩। সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য চিঠি
৪। মানপত্র ও স্মারকলিপি
৫। বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িকপত্র
৬। আমন্ত্রণ বা নিমন্ত্রণপত্র
চিঠি বা পত্র লেখতে গেলে যে কয়েকটি বিষয়কে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে।
- চিঠি-পত্রের ক্ষেত্রে কাঠামো নির্ভর করে চিঠির বিষয়বস্তুর উপর। তাই চিঠি লেখার আগে চিঠির বিষয়বস্তুর উপর প্রাধাণ্য দিতে হবে।কেনোনা ব্যাক্তিগত চিঠির কাঠামো এবং সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য লিখিত চিঠির কাঠামো কোনোদিন এক হবে না।
- আপনার লেখা চিঠিটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেতে হবে। আপনার রুচিশীল লেখনি আপনার ব্যক্তিত্বকে মর্যাদাবান করে তুলে। তাই চিঠির লেখাকে আকর্ষণীয় করতে অনেক চেষ্টা করতে হবে। তার জন্য আপনাকে লেখা গুলো স্পষ্ট করতে হবে, লেখার মধ্যে কোনো কাটাকাটি রাখা যাবে না। কেনোনা সুন্দর হাতের লেখা, পাঠক সব সময় পছন্দ করে।
- চিঠি লেখার ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহারও ঠিকঠাক করতে হবে এবং আপনাকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সবসময় চিঠি লিখতে হয় মার্জিত ভাষায়। এতে করে পাঠক এবং লেখকের মধ্যে পূর্ণ ভাব আদান প্রদান সম্ভব হয়। তাই আমি আপনাদের একান্তভাবে বলি চিঠি লেখার ক্ষেত্রে বইয়ের ভাষা ব্যবহার করুন
১।ব্যাক্তিগত পত্র বা চিঠি লেখার নিয়ম।
ব্যাক্তিগত চিঠি মুলত বন্ধুবান্ধব, প্রিয়জন কিংবা নিকট আত্বীয়দের পাঠানোর ক্ষেত্রে কাজে লাগে।যদিও এসব
চিঠি লেখার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই।
তবুও একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করে এসব চিঠি পত্র লেখা হয়। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে যেভাবে ব্যাক্তিগত চিঠি লেখা হয় ঠিক সেইভাবে আমরা উপস্থাপন করলাম।
ধাপ-১ঃ চিঠি লেখার শুরুতে একদম ডানদিকে প্রেরকের ঠিকানা লিখতে হবে। নোট=[চিঠি লেখার প্রত্যেকটি ধাপ পরপর নিচে লিখতে হয়]
ধাপ-২ঃ প্রেরকের ঠিকানার নিচে এবং বাম দিকে প্রাপকের প্রতি সম্ভাষণ জানিয়ে চিঠির মূল অংশ শুরু করতে হয়।
যেমন (প্রিয় মুশফিক ফারহান ভাই, প্রিয় নায়িকা কেয়া পায়েল, প্রিয় অমুক, প্রিয় তমুক) ইত্যাদি।
ধাপ-৩ঃ প্রাপকের প্রতি সম্ভাষণের পরে প্রাপককে শুভেচ্ছা বা সালাম জানাতে হয়। তারপর একই ধাপে আপনি কি বিষয় নিয়ে প্রাপককে চিঠিটা লিখছেন সেটা উল্লেখ করতে হয়।
ধাপ-৪ঃ এই ধাপে চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে হয়। অর্থাত পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা।
ধাপ-৫ঃ এই ধাপে প্রেরক প্রাপকে বিদায় সম্ভাষণ জানাবে এবং কোনো প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞাসা করবে।
এরপর লেখার ডানদিকে নিচে লিখতে হয় “ইতি তোমার -সম্পর্ক অনুসারে বন্ধু/ভাই/বোন/চাচা/খালা/ফুফু ইত্যাদি। এর নিচে প্রেরকের স্বাক্ষর দিতে হয়।
ধাপ-৬ঃ এই ধাপে খাম অংকন করতে হয়। যদি আপনি চিঠি খাতায় লিখেন তাহলে ধাপ-৫ এর নিচে এবং বামদিকে খাম আকবেন।
তবে অবশ্যই খামের বাম দিকে প্রেরক আর ডান দিকে প্রাপক এর (নাম-ঠিকানা) দিতে হবে।
২।আবেদনপত্র বা প্রাতিষ্ঠানিক চিঠি লেখার নিয়ম।
আবেদনপত্র বা দরখাস্ত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারযোগ্য এক ধরনের পত্র। যেহেতু এসব পত্র প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয় তাই এর আরেক নাম প্রাতিষ্ঠানিক পত্র।
আবেদনপত্র সম্পূর্ণ অফিসিয়াল কাজে ব্যবহার করা হয়। তাই আবেদন পত্রে ব্যাক্তিগত কোনো কিছু উল্লেখ করা যায় না।
আমি আবারো বলছি আপনারা যদি কোনোদিন আবেদন পত্র লিখেন তাহলে অবশ্যই সেখানে কোনো ব্যাক্তিগত তথ্য তুলে ধরবেন না।
ব দিয়ে মেয়েদের ইসলামিক নাম
আর অফিসিয়াল কাজে এই পত্রের ব্যবহারের উদাহরণ আমরা নিজেই। আমরা যদি কোনো শিক্ষার্থী, শিক্ষককে কোনো বিষয় সম্পর্কে আবেদন জানাতে চাই তাহলে অবশ্যই আবেদন পত্র লিখতে হয়।
এছাড়া আরো বলতে পারি কোনো অফিসের কর্মচারী তার বসকে যখন কোনো কিছু আবেদন করে তখন তাকে আবেদন পত্র লিকতে হয়। এসকল কাজ অফিসিয়াল বা প্রাতিষ্ঠানিক।
কথা না বাড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক চিঠি লিখার নিয়ম গুলো বলি।
ধাপ-১ঃ তারিখ (আবেদন পত্র যেদিন লিখবেন)
ধাপ-২ঃ প্রাপক অথবা শিরোনাম(এই ধাপ শুরু করতে হয় “বরাবর” দিয়ে, তারপর প্রাপকের পদবি, প্রতিষ্ঠান, এবং ঠিকানা উল্লেখ করতে হয়।)
ধাপ-৩ঃ বিষয়বস্তু (আবেদন পত্র যে বিষয়ের উপর লিখবেন)
ধাপ-৪ঃ সম্ভাষণ (প্রাপককে জনাব/জনাবা/মহোদয়/মহাত্নন ইত্যাদি দ্বারা সম্ভাষণ করতে হয় এই ধাপে। তবে সবচেয়ে ভালো হয় জনাব কিংবা জনাবা লিখলে)
ধাপ-৫ঃ আবেদন পত্রের পূর্নাঙ্গ বর্ণনা। (এই ধাপের প্রথম অংশে প্রাপক বা প্রতিষ্ঠানের সাথে আপনার পরিচয় সম্পর্কে উল্লেখ করতে হয়। তবে যথা সম্ভব কম বাক্য ব্যবহার করে।
দ্বিতীয় অংশে আপনি কোন বিষয় নিয়ে প্রাপক কে এই পত্র লিখেছেন তা বাক্যের মাধ্যমে স্পষ্ট করে তুলতে হবে।
মোট কথা যে আপনি প্রাপকের কাছে কোনো কিছু আবেদন করছেন বা চাচ্ছেন তা স্পষ্ট করে তুলতে হবে।)
ধাপ-৬ঃ বিদায় সম্ভাষণ (যেমন ইতি আপনার একান্ত বাধ্যগত ছাত্র -মোঃ লুৎফুজ্জামান শুভ)
4 জুলাই 2022
বরাবর
চেয়ারম্যান
জগতবেড় ইউনিয়ন পরিষদ
পাটগ্রাম উপজেলা
লাল্মনিহাট
বিষয় : পাঠাগার স্থাপনের জন্য আবেদন ।
মহোদয়
আমরা লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দা । আমাদের ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সাক্ষরতার হার সন্তোষজনক । তাদের অনেকেই বিভিন্ন সরকারি – বেসরকারি চাকুরিসহ নানা পেশায় যুক্ত । বর্তমানে এই ইউনিয়নে যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে নানা প্রকার সহশিক্ষাক্রম কর্মকাণ্ড এগিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় , এই ইউনিয়নে অব্যাহত শিক্ষা গ্রহণের জন্য কোনো পাঠাগার নেই । যেজন্য এই অঞ্চলের জনগণ নিয়মিতভাবে বই পাঠ করার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ।
এই অবস্থায় জগতবেড় ইউনিয়নে একটি পাঠাগার স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি ।
বিনীত
জগতবেড় ইউনিয়নবাসীর পক্ষে
মোঃ লুৎফুজ্জামান শুভ
গ্রামঃবসিরহাট, ডাকঘরঃ জগতবেড়, জেলাঃ লালমনিরহাট।