কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ তাকওয়া সমৃদ্ধ ইবাদত। এটি আল্লাহ তা’লার নিকট অত্যন্ত প্রিয় একটি আমল। কোরবানি পশু জবাইয়ের নিয়ম ও দোয়া, বান্দা তার অন্তরের নেফাক, অহংকার, রিয়া তথা লোক দেখানো থেকে মুক্ত হয়ে তার হালাল অর্থ দিয়ে হালাল পশু ক্রয় করে আল্লাহর রাস্তায় জবেহ দেওয়ার মাধ্যমেই কোরবানি সম্পন্ন করে….
অনেকেই কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়ম ও দোয়া জানেন না। হাদিসে এ সম্পর্কে রয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা।
➤ কোরবানি পশু জবাইয়ের নিয়ম ও দোয়া
কোরবানির জন্য গোশত খাওয়া হালাল এমন স্থলচর পশু বিশেষ করে কুরবানির জন্য প্রযোজ্য গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, উট ও দুম্বা ইত্যাদি পশুর কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী এবং উভয় পাশের দু’টি রগ অথবা একটি রগ কাটার মাধ্যমে জবাই বা নহর সম্পন্ন করতে হবে। (কোনো অবস্থায় পশুকে কষ্ট দেওয়া যাবেনা)
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারি ও মুসলিমে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজের কোরবানির পশু তার নিজ হাতে জবাই করেছেন।
আরো জানুন: কুরবানীর পশুর বয়স
➤নিজের কুরবানির পশু নিজেই জবাই করা মুস্তাহাব। যদি নিজের দ্বারা জবাই সম্ভব না হয় তবে অন্যের দ্বারা জবাই করানো। এক্ষেত্রে জবাইয়ের সময় কুরবানি দাতা সামনে থাকা উত্তম।
➤কুরবানির পশু জবাইয়ের নিয়ম:
জবাই করার সময় পশু ক্বিবলামুখী করে শোয়ানো। অতঃপর বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে জবাই করা।
ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ বলা পরিত্যাগ করলে জবাইকৃত পশু হারাম বলে গণ্য হবে। আর যদি ভুলবশত বিসমিল্লাহ ছেড়ে দেয় তবে তা খাওয়া বৈধ।
জবাই করার সময় কণ্ঠনালী, খাদ্যনালী, এবং উভয় পাশের দুটি রগ অর্থাৎ মোট চারটি রগ কাটা জরুরি। কমপক্ষে তিন যদি তিনটি রগ কটা হয় তবে কুরবানি শুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি দু’টি রগ কাটা হয় তবে কুরবানি দুরস্ত হবে না। (হিদায়া)
জবাই করার সময় ছুরি ভালভাবে ধার দিয়ে নেয়া, যাতে জবাইয়ের সময় পশুর অপ্রয়োজনীয় কষ্ট না হয়। যেমন- এক ছুরি দিয়ে জবাই শুরু করে চামড়া কিছু কাটার পর আর না কাটা অতপর আবার ছুরি পরিবর্তন করে জবাই করা ইত্যাদি।
কোনো ব্যক্তি জবাই করার সময় জবাইকারীর ছুরি চালানোর জন্য সাহায্য করে, তবে তাকেও বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলা।
➤কুরবানির পশু জবেহের দোয়া।
কুরবানির পশু জবাই করার সময় মুখে (উচ্চ স্বরে) নিয়ত করা জরুরি নয়। অবশ্য মনে মনে নিয়ত এ নিয়ত করা যে, ‘আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানি আদায় করছি। তবে মুখে দোয়া পড়া উত্তম।
কুরবানির পশু ক্বিবলার দিকে শোয়ানোর পর এ দোয়া পাঠ করা-
উচ্চারণ- ইন্নি-ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি- ফাতারস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ হানি-ফাও ওয়ামা- আনা মিনাল মুশরিকিন। ক্কুল ইন্না সলাতি- ওয়া নুসুকি- ওয়া মাহইয়া-য়া ওয়া মামা-তি- লিল্লা-হি রব্বিল আলামিন। লা শারি-কা লাহু- ওয়া বি-ঝা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা আওয়ালুল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা।
অতঃপর ‘বিসমিল্লাহি আল্লহু আকবার’ বলে কুরবানির পশু জবাই করা।
➤কুরবানির পশু জবাই করে এ দোয়া পড়া-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওয়া খালিলিকা ইবরাহিমা আলাইহিমাস সালাতা ওয়াস সালাম।
লক্ষ্যণীয়_হলো- যদি কেউ একাকি কুরবানি দেয় এবং নিজে জবাই করে তবে বলবে মিন্নি; আর অন্যের কুরবানির পশু জবাই করার সময় ‘মিন’ বলে যারা কুরবানি আদায় করছে তাদের নাম বলা।
- কোরবানী দাতার নিয়ত যদি ঠিক থাকে এবং তা যদি হালাল উপার্জন থেকে হয়ে থাকে তাহলে পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মুখে কোরবানী দাতা সবার নাম উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। যবাই করার সময় শুধু بسم الله ألله أكبر বলাই যথেষ্ট। আর যদি কেউ বাড়িয়ে বলতে চায় তাহলে বলবেঃ
أللهم تقبل هذا مني ومن أهل بيتي
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি ইহা আমার পক্ষ হতে এবং আমার পরিবারের সকল সদস্যের পক্ষ হতে কবুল করুন। অথঃপর ছুরি চালানোর সময় বলবেঃ بسم الله والله أكبر
- কিন্তু আমাদের সমাজে পশু যবাই করার সময় কোরবানী দাতার নামটি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে দেখা যায়, যার কোন শরঈ ভিত্তি নেই। অনেক সময় সাতভাগে কোরবানী দেয়ার সময় একটি কাগজে সাতটি নাম লিখে তা ধারাবাহিকভাবে উচ্চারণ করতে দেখা যায়। ইমাম বা হুজুর সাহেব ছুরি হাতে নিয়ে মাটিতে শায়িত পশুর গলা বরাবর দাঁড়িয়ে থাকেন আর অন্য একজন অংশীদারদের নামগুলো উচ্চারণ করেন অথবা তিনি নিজেই পড়েন। এই নিয়মটি হাদীছের কিতাবে খুঁজে পাওয়া যায় না।
মহান আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত নিয়মে কুরবানি আদায় করার তাওফিক দান করুন। সবার কুরবানিকে কবুল করুন, আমিন